No products in the cart.

গবাদি পশুর প্রধান রোগ ও ৫ টি করে প্রতিকার।
গবাদি পশুর ক্ষুরা রোগ ও প্রতিকার
ক্ষুরা রোগ কি ?
ক্ষুরা রোগ অতি তীব্র প্রকৃতির সংক্রামক ভাইরাস জনিত রোগ| এ রোগে আক্রান্ত পশুর মুখ ও পায়ে ঘা হবার ফলে খাদ্য গ্রহণ করতে পারে না এবং খুঁড়িয়ে হাটে। পৃথিবীর প্রায় সকল দেশেই এ রোগ দেখা যায়। তবে আমাদের দেশের গরুতে ক্ষুরা রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি।
প্রতিকার :
আক্রান্ত পশুকে সুস্থ পশু থেকে আলাদা করে রাখতে হবে
পরিষ্কার শুষ্ক জায়গায় রাখতে হবে।
কোনো অবস্থাতেই কাদা বা পানিতে রাখা যাবে না।
এ রোগ মারাত্মক ছোঁয়াচে। তাই আক্রান্ত পশুকে অন্যত্র নেয়া এবং বাইরের কোনো পশুকে এ এলাকায় আনা উচিৎ নয়।
আক্রান্ত এলাকার এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার সকল সুস্থ পশুকে অবিলম্বে টিকা দিতে হবে।
আক্রান্ত পশুকে নরম ও তরল খাবার যেমন- ভাতের ফ্যান বা জাউভাত খেতে দিতে হবে।
গরু ও মহিষের বসন্ত রোগ (Cow and Buffalo Pox )
গরু ও মহিষের বসন্ত মৃদু অনিষ্টকারী ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ । এ রোগে আক্রান্ত পশুর ওলান এবং বাটে বসন্তের গুটি দেখা যায় । পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এ রোগের উপস্থিতি রয়েছে। তবে, উন্নত দেশসমূহে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বিরল । আমাদের উপমহাদেশে, বিশেষ করে বাংলাদেশ ও ভারতে, এ বসন্তের প্রকোপ বেশি এবং অনেক সময় এ রোগ মহামারী আকারে দেখা দেয় ।
প্রতিকার :
ভাইরাসজনিত রোগ হওয়ায় গরু ও মহিষের বসন্তের কোনো কার্যকর চিকিৎসা নেই । তবে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের মাধ্যমে জটিলতা সৃষ্টি রোধকল্পে স্থানীয়ভাবে জীবাণুনাশক এবং সাধারণভাবে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যেতে পারে । দোহনের পূর্বে ১০% সালফাথায়াজল মলম অথবা ৫% সালফাথায়াজল ও ৫% স্যালিসাইলিক অ্যাসিডের সংমিশ্রণে প্রস্তুত মলম বাটে ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায় ।
গরুর লাম্পি রোগ
১৯২৯ সালে আফ্রিকার ‘জাম্বিয়া’ প্রথম অফিসিয়ালি শনাক্ত হওয়া এই রোগ ১৯৪৩ সাল থেকে ৪৫ সালের মধ্যে মহাদেশের বিস্তীর্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। গরুর গায়ে প্রথমে পক্সের মতো বের হয়ে ছড়িয়ে পড়ে পুরো গায়। এই রোগে গরু মরে না। তবে রোগটি হয়ে ফোড়া ফেটে যাওয়ার পর ঘন ঘন ড্রেসিং না করলে এবং পশুর যত্ন না নিলে গরু মারা যায়। গরুর লাম্পি রোগ আসলে গরুর স্কীন রোগ বা চর্ম রোগ।
প্রতিকারে কৃষক সচেতনতা ও করণীয়
যেকোন রোগের চিকিৎসার চেয়ে প্রতিকার সব সময় অধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক।
» আক্রান্ত গরুকে নিয়মিত এলএসডি ভ্যাকসিন দেয়া। আমাদের দেশে ইতঃপূর্বে রোগটির প্রাদুর্ভাব কম দেখা গেছে তাই এই রোগের ভ্যাকসিন সহজলভ্য নয়।
» খামারের ভেতরের এবং আশেপাশের পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা যেন মশা মাছির উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
» আক্রান্ত খামারে যাতায়াত বন্ধ করা এবং আক্রান্ত খামার থেকে আনা কোনো সামগ্রী ব্যবহার না করা।
» আক্রান্ত গরুকে শেড থেকে আলাদা স্থানে মশারি দিয়ে ঢেকে রাখা মশা মাছি কামড়াতে না পারে। কারণ আক্রান্ত গরুকে কামড়ানো মশা মাছি সুষ্ঠু গরুকে কামড়ালে এই রোগের সংক্রমণ হতে পারে।
» আক্রান্ত গভীর দুধ বাছুরকে খেতে না দিয়ে ফেলে দিয়ে মাটি চাপা দেয়া।
নাভেল ইল বা জয়েন্ট ইল (Navel III/ Joint Ill)
এটি বাছুরের একটি সংক্রামক রোগ। এ রোগের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে প্রথমে নাভিতে (Navel) প্রদাহ (Inflammation) হবে এবং পরে শরীরের বিভিন্ন সন্ধি বা জয়েন্টে, বিশেষ করে পায়ের সন্ধিগুলোতে, প্রদাহের সৃষ্টি হবে । এ রোগ এদেশে বিক্ষিপ্ত আকারে দেখা যায় । এতে কোনো মড়ক লাগে না ।
গবাদিপশুর রোগ ও প্রতিরোধ
নবজাত বাচ্চা জন্মের কয়েকদিনের মধ্যেই আক্রান্ত হতে পারে । গরুমহিষের বাছুর ছাড়াও ঘোড়া, ভেড়া ও ছাগলের বাচ্চা এতে আক্রান্ত হতে পারে ।
রোগপ্রতিরোধ
এটি এমন একটি রোগ যা পশুর মালিক বা পালনকারী কিছুটা সাবধানতা অবলম্বন করলে প্রতিরোধ করা সম্ভব । তাছাড়া নিম্নোক্ত ব্যবস্থাদি গ্রহণ করলে সুফল পাওয়া যাবে । যেমন—
স্বাস্থ্যসম্মত বিধিব্যবস্থা অবলম্বন করতে হবে ।
জন্মের পর বাচ্চার নাভিতে টিঙ্কচার আয়োডিন বা টিঙ্কচার বেনজিন লাগাতে হবে ।
গাভীর গর্ভফুল যেন বাছুরের সংস্পর্শে না আসে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে ।
গাভী যাতে বাছুরের নাভি না চাটতে পারে তাই গাভীর মুখে মুখবন্ধনি বা ঠুসি পড়িয়ে দিতে
হবে ।
বাছুরের ডিপথেরিয়া রোগ (Calf Diptheria)
বাছুরের ডিপথেরিয়া একটি মারত্মক সংক্রামক রোগ । স্বরযন্ত বা ল্যারিংস (Larynx) এবং গলবিল বা ফ্যারিংসের (Pharynx) প্রদাহকে ডিপথেরিয়া বলে । এটি প্রধানত অল্প বয়স্ক বাছুরে হয় । অনেক সময় জন্মের তৃতীয় দিন থেকে দেখা দিতে পারে । এতে স্বরযন্ত ও গলবিলের মিউকোসার উপর একটি পচনশীল বা নেক্রোটিক (Necrotic) আবরণী পড়ে । ফলে লুমেন ছোট হয়ে আসে এবং শ্বাস নিতে অসুবিধা হয় । চিকিৎসা না করলে ২-৭ দিনের মধ্যে বাছুর মারা যেতে পারে । অনেক সময় জীবাণু ব্রঙ্কাস (Bronchus) ও ফুসফুসে গিয়ে ব্রঙ্কোনিউমোনিয়া (Bronchopneumonia) এবং টক্সিমিয়া (Toxemia) বা রক্তদুষ্টি সৃষ্টি করতে পারে । ফলে বাছুর মারা যেতে পারে ।
চিকিৎসা
সোডিয়াম সালফাডিমিডিন, সালফাপাইরিডিন, সালামেথাজিন প্রভৃতি সালফোনেমাইড গ্রুপের ওষুধের যে কোনো একটি নির্ধারিত মাত্রায় ইনজেকশন আকারে প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায় । এছাড়া উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে, সব ক্ষেত্রেই ওষুধের পুরো কোর্স শেষ করতে হবে ।
রোগপ্রতিরোধ
নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মেনে চললে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায় । যথা— স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে বাছুর পালন করা ।
পশুর ঘর নিয়মিত জীবাণুনাশক ওষুধ দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে ।
বাদলা রোগ
বাদলা রোগ বাড়ন্ত বয়সের রোমন্থক পশুর একটি তীব্র প্রকৃতির ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রামক রোগ । এটি মাটিবাহিত রোগ, তবে ছোঁয়াচে নয় । এ রোগে প্রধানত পশুর পা আক্রান্ত হয় ও আক্রান্ত স্থান কালো হয়ে যায় । তাই একে ইংরেজিতে ব্ল্যাক লেগ (Black Leg) বলে । এছাড়াও এ রোগকে ব্ল্যাক কোয়ার্টার (Black Quarter), কোয়ার্টার ইভিল (Quarter Evil) বা কোয়ার্টার ইল (Quarter III) নামে অভিহিত করা হয় । এ রোগটি সাধারণত বর্ষাকালে হয় বলে বাংলাদেশে এটিকে বাদলা রোগ বলে । প্রধানত বাড়ন্ত বয়সের গরু ও ভেড়াই এতে বেশি আক্রান্ত হয় । আক্রান্ত পশুর সঞ্চালক পেশিতে (Skeletal Muscle) পচনশীল (Necrotizing) বা গ্যাংগ্রিনাস (Gangrenous) প্রকৃতির প্রদাহের সৃষ্টি হয় । এ স্থান হতে জীবাণুর বিষ রক্তে মিশে মারত্মক ধরনের টক্সিমিয়ার (Toxemia) সৃষ্টি করে । ফলে অধিকাংশ পশু মারা যায় । ক্ষতস্থানে গ্যাস সৃষ্টি হয়, যা টিপলে পচ্ পচ্, ভজ্ ভজ্, কর্ কর্ বা পুর পুর শব্দ অনুভূত হয় ।
চিকিৎসা
লক্ষণ প্রকাশের সাথে সাথে এ রোগের চিকিৎসা করতে হবে। বিলম্বে করলে ওষুধে কাজ হবে না ।
আক্রান্ত পশুর শিরা বা ত্বকের নিচে ১০০-২০০ মি.লি. হিসেবে অ্যান্টিব্ল্যাক লেগ সিরাম ইনজেকশন করতে হবে ।
অ্যান্টিসিরাম প্রয়োগ করার পর বা না পাওয়া গেলে নিম্নের যে কোনো একটি অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করলে সুফল পাওয়া যাবে । যেমন-
প্রথমে ক্রিস্টালিন পেনিসিলিন ১০-২০ লাখ ইউনিট শিরায় মধ্যে ইনজেকশন করলে দ্রুত কাজ আরম্ভ হয় । এরপর ১০-২০ লাখ ইউনিট প্রোকেইন
রোগপ্রতিরোধ
টিকা প্রয়োগের মাধ্যমে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায় । তিন মাসের বেশি বয়সের গরুর ত্বকের নিচে ৫ মি.লি. মাত্রায় ও ভেড়ায় ২ মি.লি. মাত্রায় ব্ল্যাক কোয়ার্টার ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হবে । ৬ মাস অন্তর এ টিকা প্রয়োগ করা উচিত । এছাড়াও স্বাস্থ্যসম্মত বিধিব্যবস্থার মাধ্যমে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায় । যেমন— আক্রান্ত পশুকে সুস্থ পশু থেকে পৃথক করে চিকিৎসা করতে হবে । আর মৃত পশুকে সঠিক নিয়মে মাটির নিচে পুতে রাখতে হবে ।